কবিতা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
কবিতা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
কামরুজ্জামান কামু'র কবিতা

কামরুজ্জামান কামু'র কবিতা

কামরুজ্জামান কামু'র কবিতা

আমাকে এবার পিছমোড়া করো

আমাকে এবার পিছমোড়া করো
চোখ বেঁধে ফেল প্রভু
আমি কোনোখানে কোনো মানুষের
হৃদয় দেখিনি কভু
আমি শুনি নাই কম্পিত রাতে
কোনো প্রহরীর হাঁক
আজি বসন্তে কালো কোকিলের
তীক্ষ্ণ মধুর ডাক
অন্ধকারের বুক থেকে এনে
চয়িত শব্দমালা
বসিয়েছি শুধু কবিতার দেহে
উদ্গীরনের জ্বালা
আমাকে এবার গুলি করো প্রভু
পাহাড়ে ও সমতলে
আমার শরীর লুটায়ে পড়ুক
কালো যমুনার জলে
আমিই সালাম আমি বরকত
আমি রফিকের ভাই
লেখামাত্রই আমার কবিতা
লাল হয়ে গেল তাই
এই মাঠঘাট এই বন্দর
এই মানুষের সারি
হে অবদমিত পৃথিবীর বুকে
উন্মুল নরনারী
এই বুকফাটা কান্নার রোল
আকাশপাতাল ধ্বনি
নিজ হাতে আমি খুবলে তুলছি
নিজের চোখের মনি
শত গোয়েন্দা দৃষ্টির ফাঁদ
সহস্র বন্দুক
নস্যাৎ করে সম্মুখে এসে
পেতে দিয়েছি এ বুক
আমিই সালাম আমি বরকত
আমি রফিকের ভাই
লেখামাত্রই আমার কবিতা
লাল হয়ে গেল তাই
পৃথিবীর বুকে আমি সেই কবি
আমি সেই চন্ডাল
আমি সেই লোক কালো ও বধির
আমার রক্ত লাল
আমি সন্ত্রাসী আমি ধর্ষক
আমি ধর্ষিত নারী
আমি তোরই ছেলে বুকে তুলে নে মা
ফিরেছি নিজের বাড়ি
হৃৎপিণ্ডের ঢিপঢিপ ধ্বনি
চঞ্চল রক্তের
ফিনকির মত ছিটকে বেরিয়ে
দেহে ফিরে আসি ফের
করি লেফটরাইট গুম করি আর
গুম হয়ে যাই নিজে
শুষ্ক রজনী কাষ্ঠ দিবস
ঘেমে উঠে যায় ভিজে
নিজের রক্ত নিজে পান করি
নিজ দংশনে নীল
নেশায় মত্ত মদের পাত্র
হয়েছে আমার দিল
আমাকে তোমার মনোরঞ্জনে
রঞ্জিত রাত্রির
কিনারায় নিয়ে ধর্ষণ করো
ধ্বস্ত করো হে নীড়
তনুর মায়ের শূন্য বুকের
মহাশুন্যতা হয়ে
বোবা পৃথিবীর বায়ুসম আমি
চিরকাল যাব বয়ে
কালোত্তীর্ণ কালের কান্না
হে মহাকালের মাটি
আমি রবীন্দ্র আমি নজরুল
ধরণীর বুকে হাঁটি
কেঁপে কেঁপে উঠি শিহরিত হই
পায়ের তলার ঘাসে
মরা কোষগুলি জৈবপ্রেষণে
চিৎকার করে হাসে
সংক্ষুব্ধের সংহার সম
শঙ্কিত এই রাতে
জন্ম দিয়েছি কোরবানি তোকে
করব রে নিজ হাতে
আজানের ধ্বনি ভেসে এলো ওই
পাখিদের কলরবে
একটিমাত্র গুলির আঘাতে
আমার মৃত্যু হবে
একটিমাত্র চিৎকার আজ
করব ভূমণ্ডলে
আমি বরকত সালাম রফিক
মরব মায়ের কোলে
আমাকে এবার পিছমোড়া করো
চোখ বেঁধে ফেল প্রভু
আমি কোনোখানে কোনো মানুষের
হৃদয় দেখিনি কভু
শুধু যুদ্ধের গোলা-বারুদের
শুধু হিংসার বাণী
প্রলয়ঙ্করী পৃথিবীতে কাঁপে
বেদনা-লতিকাখানি
শেষ নিশ্বাস এতো ভারী কেন
অসহ জগদ্দল
চারিদিকে মম ঘোরাফেরা করে
নায়কের মত খল
চারদিক কেন চেপে আসে আরও
চারিদিকে বন্দুক
গুলির শব্দে কেঁপে কেঁপে ওঠে
বাংলাদেশের বুক

সময় নষ্ট

সময় নষ্ট কোরো না তো আমি
অফিসে যাব রে বাবা

কত কত আমি নর আর নারী
কত সিরিয়াস কত কারবারি
রাষ্ট্রযন্ত্র তন্ত্রমন্ত্র
জাহাজ বেচিয়া আদার ব্যাপারী
আদা হতে জল আলেদা করিয়া
তিলটিকে আমি তালগাছ ভ্রমে
আগায় চড়িয়া বসেছি

কবিতা কবিতা কোরো না তো আমি
ঘড়ি পড়ে গেল খুলিয়া
পড়িমরি যেন কারে ধরি কেন
ওয়ানা বি ওয়ানা বি হেন

আমেরিকা যাব সুইট যার ল্যান্ড
যাব কঙ্গো যাব সিরিয়ায়
ব্রিটেন-চায়না-আটোয়ারি-বোদা
দৌড়াতে হবে সদাসর্বদা

অফিসে যাব রে বাবা

ময়না

ধানক্ষেত যদি পার হয়ে যাই
কী হবে বল তো, ময়না
উৎখাত হই? এখানে বৃষ্টি
আদিকাল থেকে হয় না

এখানে সৃষ্টি হয় না তেমন
বিস্ময়কর বাণী
খাঁ খাঁ রোদ্দুর ফাটা প্রান্তর
মরে যাব আমি, রাণী

তৃষ্ণায় ফেটে চৌচির হয়ে
খ্রিষ্টীয় কোনো অব্দ
প্রেয়সীর বুকে গম্ভীর নাদে
হলো আজ নিস্তব্ধ

এই বঙ্গীয় সমাজের শত
মানবীয় আখ্যানে
তোমারে তো আমি আরাধনা করি
আমার কবিতা-গানে
 দামকুঁড়াহাটের বেচাকেনা | শাহীন মোমতাজ

দামকুঁড়াহাটের বেচাকেনা | শাহীন মোমতাজ

 দামকুঁড়াহাটের বেচাকেনা | শাহীন মোমতাজ

এইরকম নদীতীর আমার ভাল লাগে না। এইরকম বিশ্রাম আর সারি সারি পশুর দোকানে বিষ্ময়চিহ্নের মত একেকটা দালাল আর আমি স্পাইদের চোরাচোখ উপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত ও বিস্রস্ত। এইরকম বেচাকেনাও আমার নির্দেশিত নয়।

মূলত: আমি যা নির্দেশ করি তার কোন অর্থ নাই, সেইসব নিয়তিনির্দেশ। আর সেসবের তফসির তথা প্রতিব্যাখ্যা, তা-ও আমি বহুপ্রচারিত কোন সঙ্গীতের শুরুটা শুনলেই তার তাল লয় ধরে ফেলবার মত পরিপক্কতা নিয়ে বিবেচনা করি।

পশুদের করুণ চাহনি, তাদের বিষ্ঠা আর চোনাগন্ধে বিশোধিত বাঙ্ময়তা সবই আমার ও আমার বন্ধুপত্নীর চোখে মোহনীয় লাগে। আমাদের পারস্পারিকতা এই হাটে শুরু হয়ে একদিন শেষ হয়ে যাবে। তার চোখের গাঢ় লালিমা আর দৃষ্টিবিক্ষেপ, উন্নাসিকতা আর বিন্দু বিন্দু, উদ্বাহু আর উৎকেন্দ্রিকতা সবকিছু, আমার, মধ্যহাটের একমাত্র বাণিজ্যবিমুখ এই বিক্রেতার কাছে, সন্ধ্যার মতো অতি মনোহর হয়ে ফুটে ওঠে।
আরণ্যক টিটোর কবিতা

আরণ্যক টিটোর কবিতা

আরণ্যক টিটোর কবিতা

সোনাকাণ্ড

বাঙ্গালীর কাছে যোনি/ধোনের অপর সমার্থক শব্দ 'সোনা'! ভাবতেই তাল/গোল পাকে।
আচ্ছা
যোনি/ধোন কি সোনার মত দামি কোনও অলংকার ছিলো সমাজের কাছে, কি শরীরশোভায়, কি অর্থমূল্যে?...
না হলে যোনি/ধোন কী 'ভাবে' সোনা হয়? (মদন, তুমি কি কিছু জানো এ বিষয়ে?...)

এখন তো 'সোনা' ঐশ্বর্য্যের সর্বোচ্চ অর্থ/মূল্য না... অলংকার হিসেবে এরও উপরে আছে হীরা, প্লাটিনাম...

তাহলে এখন বাঙ্গালীর কাছে যোনি/ধোনের সমার্থক শব্দ ‍‍"সোনা” না হয়ে হীরা বা অন্যকোন অলংকারের নামে আদরনীয় হয়ে উঠছে না কেন? কিছুই বুঝি না!
(মদন, তুমি চুপ্ কেন?... মত বাতলাও!...)

কবে যে বাঙ্গালী যোনি/ধোনকে 'হীরা' বলে ডেকে ওঠবে, কিংবা প্লাটিনাম.....
'সোনা' শব্দটি শোনার সাথে সাথে লজ্জায় লাল হয়ে উঠতে হবে না আর!...
'কে কী ভাবে'
ভয়ে
ভাবের বাউল গাইতেও পারছে না : সোনাবন্ধু তুই আমারে করলিরে দিওয়ানা!...

বনিকের দল চেটে গেছে সোনার বাংলা, এখন চাটছে কোন সে নাগরসমাজ, অর্থনীতি মুখোপাধ্যায়?...
(মদন, তুমি চুপ্ কেন?... নাকি ভিতরে ভিতরে মজা নিচ্ছো মামা?)...

কুহু

লেহ্য চোষ্য পেয়/
চর্বিতচর্বণ/
তুঁহু/
অনন্ত আধার/...
পর্বে পর্বে উন্মোচনে/
রূপের বিভঙ্গী তুঁহু/ সৃজনের অন্ধকারে ফোটা শতদল/
আধেয় প্রিয়াসি মম/ চিত্তের বিকার/...
তুঁহু/
ফুলেল গুঞ্জনে ডেকে ওঠা/
কুহু/...
কু-হু কু-হু/
ছড়িয়ে পড়ছো/ বনান্তরে/…
কালান্তরে/…

বলীদান

রূপকথার গল্পে
বলী ছাড়া
রাজার খনন করা দীঘিতে জল ওঠে না।...
বলেছেন, ঠাকুরমার ঝুলি!

দীঘি, জল আর বলী
এইসব
রূপকের ইশারা!...

বলীপ্রথা
আজও দৃশ্যমান, অন্যরূপে, কি সমাজ, কি রাষ্ট্রে...

এমনই অজস্র বলিদানে
আজো
কানে বাজে, দীঘির দীঘল কথামালা...
জীবনের
বেদীতে দাঁড়িয়ে... গাইছি আজও, কত প্রাণ হল ব-লী-দা-ন...
তিনটি কবিতা | সাম্য রাইয়ান

তিনটি কবিতা | সাম্য রাইয়ান

তিনটি কবিতা | সাম্য রাইয়ান


হামিংবার্ড

চোখের ভেতরে একটা হামিংবার্ড
নিয়ে বসে আছি;
চমকে দিওনা তাথৈ
উড়ে যাবে ৷

উড়ে যাবে তারা, স্বপ্নেরা
সারি সারি ডানা
ঘুমের ভেতরে বয়ে চলা নদী
হাতের তালুতে বয়ে যাবে
ঢোড়া সাপ, রক্তের ধারা ।

জলের অপেরা

চিরকাল, তুমি চোখের ভেতরে হামিংবার্ড পোষো
হামিংবার্ড; ঋতুহননের কৌশল শেখা হলে
ক্রোধের বসন্ত জাগিয়ে সারাদিন, দাওয়ায় বসে
থাকো! —নাচের পুরনো মুদ্রা
আদিম কসরত থেকে ঝরে যায় অমীমাংসিত
আগুনের অপেরা। সফরকাণ্ড থেকে জলের
গভীর—নিম্নস্তরে প্রথম আকাশ দেখা যায় না।


প্রকৃত শরীর

মনের ভিতরে আছে প্রকৃত শরীর; উহু শরীর
খোঁজবারে কী নির্মমভাবে সে কথা ভুলে যাই, যেভাবে
ভুলে যাই গুটিকয় পাঞ্জাবীর কথা, প্রতিবার গমনের কালে
গোলাপবনের দিকে এগিয়ে যাবোনা অহেতুক।

কিচ্ছু চেনা হয় নাই গহীনের প্রাণ, শুধু ধনুকের থেকে
শিখে নিয়েছি জোড়ালো গমনসঙ্গীত। মনের
ভিতরে আছে প্রাকৃত শরীর; যাকে কখনোই জানা হয় নাই।